বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি এর ইতিহাস

বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ঋকবেদের ‘ঐতরেয়আরণ্যকে' সর্বপ্রথম 'বঙ্গ' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় রামায়ণে 'বঙ্গ' এবং মহাভারতে 'বঙ্গদেশ' শব্দটির উল্লেখ রয়েছে । প্রাচীনতম বাঙালি কবি ‘ভুসুকু’ (অষ্টম-দশম শতকে) -এর কবিতায় প্রথম 'বাঙালি' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে মুসলমান আমলেই বাংলাভাষী সমুদয় অঞ্চল ‘বাংলা’ বা 'বাঙ্গালা' নামে পরিচিতি লাভ করে। এ থেকে ইউরোপীয়গণ একে বেঙ্গল (Bengal) নামকরণ করে। ৬ ড. সুকুমার সেনের মতে, ফারসী 'বঙ্গালহ' থেকে পর্তুসিজ Bengala এবং ইংরেজি Bengal নামটি এসেছে।

বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি এর ইতিহাস

সম্রাট আকবরের মন্ত্রী আবুল ফজল 'বাংলা' নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: “ এই দেশের প্রাচীন নাম ছিল বঙ্গ। প্রাচীনকালে ইহার রাজারা ১০ গজ উচ্চ ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকাণ্ড ‘আল' নির্মাণ করিতেন; কালে ইহা হইতেই 'বাঙ্গলা' এবং 'বাঙ্গালা' নামের উৎপত্তি।” সুতরাং বঙ্গ + আল = বঙ্গাল> বঙ্গ > বাংলা। কিন্তু রমেশ্চন্দ্র মজুমদার প্রমুখ ঐতিহাসিক এই যুক্তি সমর্থন করেন না। শ্রী মজুমদারের মতে 'বঙ্গাল' দেশের নাম থেকেই 'বাংলা' নামটির উদ্ভব। তার যুক্তি হল বর্তমানে বাংলাদেশের অধিবাসীদের নিন্দাসূচক ‘বাঙ্গাল' নামে অভিহিত করার কারণ হল তারা 'বঙ্গাল' দেশের অধিবাসী।


ইদানীং কতিপয় পণ্ডিত ব্যক্তি বিভিন্ন ধর্মপুস্তকের বর্ণনা এবং আনুষঙ্গিক তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘বাঙালি' জাতিকে হজরত নূহ (আ:) -এর বংশধর বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, হজরত নূহ (আঃ) এর প্রথম পুত্র হাম (৪পুত্র : হাম, সাম, ইসফেস ও কেনান) -এর ৬ পুত্রের (হিন্দ, সিন্ধ, হাবাশ, জানাস, বার্বার, নিউবাহ) মধ্যে প্রথম পুত্র হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র বঙ্গ-এর বংশধরগণ বাংলায় বসতি স্থাপন করেন বলে তাদের নাম থেকে 'বঙ' বা 'বাংলা' নামের উৎপাত্তি ঘটেছে। তবে এটি এখনও ঐতিহাসিকভাবে অবিসংবাদিত বলে গৃহীত হয়নি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url