স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট । স্বদেশ প্রেম রচনা । স্বদেশ প্রেম প্রবন্ধ রচনা । স্বদেশ প্রেম রচনা pdf

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা , Educationalblogbd.Com e আপনাদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা । আশা করি মহান আল্লাহ তা'লার অশেষ মেহেরবাণিতে আপনারা সবাই ভালো আছেন । আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো  স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট । স্বদেশ প্রেম রচনা । স্বদেশ প্রেম প্রবন্ধ রচনা । স্বদেশ প্রেম রচনা pdf  নিয়ে । আপনারা যদি এই রচনাটিকে আত্নস্থ করতে চান তাহলে এই পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়তে থাকুন্‌ একেবারে শেষ অংশে  স্বদেশ প্রেম রচনা pdf  লিংকে দেয়া আছে, ডাউনলোড করে নিও, চলুন শুরু করা যাকঃ- 

স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট । স্বদেশ প্রেম রচনা । স্বদেশ প্রেম প্রবন্ধ রচনা । স্বদেশ প্রেম রচনা pdf 

shodesh-prem-20-point-rochona-pdf



স্বদেশপ্রেম প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায়ঃ-

> দেশপ্রেম 

> স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম 

> জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব 


> প্রবন্ধ-সংকেত

ভূমিকা, দেশপ্রেমের স্বরূপ, স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও দৃষ্টান্ত, দেশপ্রেমের উপায়, দেশপ্রেমের প্রায়োগিক ক্ষেত্রসমূহ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে আমাদের করণীয়, দেশপ্রেম, রাজনীতি ও সমাজনীতি, দেশপ্রেম উজ্জীবনে সাহিত্য ও সংস্কৃতি, স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম, উপসংহার



স্বদেশপ্রেম 

ভূমিকা :

"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে

সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জননী যেমন সন্তানের কাছে আজীবন পূজনীয়, দেশও তেমনি মানুষের কাছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মোহনীয়। তাই জন্মলগ্ন থেকে মায়ের মতো দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। স্বদেশ যত ক্ষুদ্র, দুর্বল বা সমস্যাপীড়িত হোক না কেন, প্রতিটি মানুষের কাছে তার দেশ সকল দেশের সেরা। স্বদেশের মানুষ, তার প্রকৃতি, প্রাণিকুল, প্রতিটি ধূলিকণা দেশপ্রেমিকের কাছে পরম পবিত্র। দেশমাতৃকার মৃন্ময়ী মূর্তি শুধু কাদা-মাটি-জলে নির্মিত প্রতিমামাত্রই নয়, হৃদয়ের নিবিড় ভালোবাসায় এবং গভীর মমত্ববোধে সে অন্তরের অন্তস্তলে পরিগ্রহ করে চির আরাধ্য চিন্ময়ী মূর্তি। দেশপ্রেমিক মানুষ তার ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি অর্জনে স্বীকার করেন দেশের অবদান। স্বদেশের স্বার্থ রক্ষায় তাঁরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। এমনকি দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতেও তাঁরা পিছপা হন না ।


দেশপ্রেমের স্বরূপ : যে ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশে মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং বেড়ে ওঠে সেটিই স্বদেশ। স্বদেশের প্রতি মানুষের একটি স্বাভাবিক আন্তঃআকর্ষণ গড়ে ওঠে। এ থেকেই স্বদেশপ্রেমের শুরু। স্বদেশপ্রেম মানুষের একটি সহজাত গুণ । জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ দেশের মাটি, পানি, আলো, বাতাস, পরিবেশ, সংস্কৃতি ইত্যাদির সংস্পর্শ লাভ করে। তার দেহ, মন, আদর্শ সবকিছুই দেশের নানা উপাদান দ্বারা পুষ্ট। তাই মানুষ স্বদেশের মানুষ, প্রকৃতি, ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছুকে ভালোবাসে। স্বদেশের প্রতি এ ভালোবাসাই হলো স্বদেশপ্রেম।

বস্তুত দেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্ভ্রমবোধ থেকে। যে জাতির আত্মসম্ভ্রমবোধ যত প্রখর, সে জাতির স্বদেশপ্রেম তত প্রবল। নিঃস্বার্থ, অহিংস দেশপ্রেমই স্বদেশপ্রেম। ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে যখন মন পরিচালিত হয়, যখন আত্মকল্যাণের চেয়ে বৃহত্তর কল্যাণবোধ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখনই জ্বলে ওঠে স্বদেশপ্রেমের নিষ্কলুষ প্রদীপশিখা। পরদেশি শাসকের রক্তচক্ষু, উদ্যত অস্ত্র কিংবা পথের কোনো বাধা তাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপকে নিবৃত্ত করতে পারে না। তারা মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে এগিয়ে যায় দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার টানে। তাই কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন-

“স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে

কে বাঁচিতে চায়? দাসত্ব শৃঙ্খল বল, কে পরিবে পায় হে

কে পরিবে পায়?”

স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও দৃষ্টান্ত : দেশপ্রেমিক যাত্রই দেশকে ভালোবাসেন। স্বদেশপ্রেম মানবচিত্তে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময়ে, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তা জেগে ওঠে। দেশাত্মবোধ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভেদ ভুলে একই ভাব চেতনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করে। আবার দেশ যখন পরাধীনতার নাগপাশে বন্দী হয়, ভিনদেশি শাসক-শোষকের নির্যাতনে দেশের মানুষের যখন নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয় তখন স্বদেশপ্রেম জাতীয় জীবনে জাগ্রত হয়। দেশপ্রেমিক দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেন। যুগে যুগে অনেক মনীষী দেশের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দেশপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। উপমহাদেশের তিতুমীর, রানা প্রতাপ, শিবাজী, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলেনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর প্রমুখ দেশপ্রেমের অম্লান স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে দেশপ্রেমিক হিসেবে অমর হয়ে আছেন। এছাড়া শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, ইতালির গ্যারিবালডি, রাশিয়ার লেনিন ও স্টালিন, চীনের মাও সেতুং, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা প্রমুখ ব্যক্তিগণ বিশ্বঅঙ্গনে দেশপ্রেমের উৎকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।


দেশপ্রেমের উপায় : পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই দেশপ্রেমের কথা বলা হয়েছে। সকল ধর্মেই দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মানুষ যেকোনো স্থান থেকে, যেকোনো অবস্থান থেকে দেশকে ভালোবাসতে পারে, তার স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। দেশের জন্য, জাতির জন্য, দেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হলে দেশের প্রতিটি উপাদানকে ভালোবাসতে হবে। নিজের দুঃখদশাকে ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।


দেশপ্রেমের প্রায়োগিক ক্ষেত্রসমূহ : দেশপ্রেম শব্দটি কেবল একটি নির্দিষ্ট ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মানুষের প্রতিটি কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে, চলনে-বলনে, পোশাক-পরিচ্ছদে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে এবং দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তোলা যায়। সংস্কৃতি দেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নিজ দেশকে ভালোবাসা মানে দেশীয় সংস্কৃতিকে নিজ হৃদয়ে লালন করা। বিশ্বায়নের প্রভাবে আমরা পরিচিত হচ্ছি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে। আমাদের দেশের তরুণ সমাজ আজ নিজ সংস্কৃতি ভুলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে অন্ধ অনুকরণ করছে। তাদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, রুচি প্রভৃতি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা চলতে দেওয়া যাবে না। নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে লালন করে একে আরও যুগোপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। টাকা আছে বলেই বিদেশি পণ্য ব্যবহার করব এ ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশজ পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হতে হবে। দেশীয় পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে দেশজ শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রেখে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে হবে। প্রবাসে কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হবে এবং সৎ থাকতে হবে। কারণ এর মাধ্যমেই বিদেশিরা আমাদের দেশ সম্পর্কে ধারণা লাড করতে পারবে । তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে কীভাবে বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশকে মর্যাদার সামনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।


দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে আমাদের করণীয় : জন্মের পর থেকেই আমাদের হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হতে থাকে। এটি এমন একটি বিষয় যা কখনো শিখিয়ে দিতে হয় না। এটি জন্মসূত্রেই মানুষের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। তারপরও দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধকরণের প্রয়োজন আছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে নিম্নোক্ত উদ্যোগ নিতে হবে-

ক. ব্যক্তি নয়, দল নয়, দেশই বড়। এই বোধ সাধারণের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে।

খ. মা ও দেশকে সমানভাবে ভালোবাসতে হবে। গ. প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব কর্তব্য সততার সাথে পালন করতে হবে।

ঘ. কোনো অন্যায়, অবিচার বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না । ৩. দেশের প্রচলিত আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে ।

চ. দেশের সকল মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে হবে । ছ. দেশ যত ক্ষুদ্র, দুর্বল, দরিদ্র হোক না কেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে।

জ. জাতীয় প্রচার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে উৎসাহব্যঞ্জক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। 

ঝ. বিদেশি সংস্কৃতি নয়, নিজস্ব সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করতে হবে।


দেশপ্রেম, রাজনীতি ও সমাজনীতি : রাজনীতির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিবিদরা উৎসর্গ করেছিলেন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, জীবন। ভিনদেশি শাসকের হাতে তাদের নির্যাতিত হতে হয়েছে, কারারুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে রাজনীতির সেই কাছে লঙ্ঘিত হয় মানবাধিকার, ভূলুণ্ঠিত হয় মানবতা। রাজনীতির এই পচনের জীবাণু সমাজনীতিকেও আক্রমণ করেছে। আদর্শ নয়, ধারা অব্যাহত নেই । দেশ-জাতি তথা জনগণের কল্যাণ নয়, ক্ষমতাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের ক্ষমতার কাছে, দাপটের অর্থবিত্ত ও ক্ষমতাই আমাদের বর্তমান সমাজের চালিকাশক্তি। এখানে ন্যায়, নীতি, সততার স্থান প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ রাজনীতির মতো সমাজনীতিরও লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন মানবকল্যাণ ।

দেশপ্রেম উজ্জীবনে সাহিত্য ও সংস্কৃতি : মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটাতে সাহিত্য ও সংস্কৃতি উজ্জীবনীশক্তি হিসেবে কাজ করে। মানুষের মধ্যে আদর্শবোধ, দায়িত্ববোধ সৃষ্টিতে সাহিত্য অনেকটা সম্মোহনীশক্তির মতো কাজ করে। মানুষের মনে দেশের জন্য কাজ করার বোধটি অনেক সময় সাহিত্য তৈরি করে দেয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেছেন-

"জন্মভূমি রক্ষা হেতু কে ডরে মরিতে?

যে ডরে, ভীরু সে মূঢ়, শত ধিক তারে।”

এ রকম অনেক কবিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছে অনেক সাহসী তরুণকে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে

এদেশে ছাত্র-জনতা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে দিয়েছিল। তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে

মাতৃভাষার মর্যাদা। কবি আবুজাফর ওবায়দুল্লাহর ভাষায়—

"মাগো, ওরা বলে,

সবার কথা কেড়ে নেবে;

তোমার কোলে শুয়ে

গল্প শুনতে দেবে না, বল, মা, তাই কি হয়?”

ভাষা আন্দোলনের উত্তরকালে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামকে উদ্বুদ্ধ করেছে ভাষা আন্দোলনাভিত্তিক রচিত সাহিত্য। মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি', কিংবা ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা' এসব সঞ্জীবনী গানে উজ্জীবিত হয়ে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেয় যুদ্ধে। এখনও দেশাত্মবোধক গান, কবিতা প্রভৃতি আমাদের হৃদয়ে নতুন করে দেশপ্রেমকে জাগিয়ে দেয় ।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : মানুষ বৃহত্তর অর্থে এ পৃথিবীর সন্তান। তাই দেশের প্রতি যেমন প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে, বিশ্বের প্রতিও অনুরূপ। স্বদেশপ্রেম মূলত বিশ্বপ্রেমেরই একটি অংশ। স্বদেশপ্রেমের মধ্য দিয়েই জাগ্রত হয় বিশ্বপ্রেমের মহান চেতনা। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কখনো অন্য দেশের অকল্যাণের কথা ভাবতে পারে না। তার দেশপ্রেমই তাকে জানিয়ে দেয়- এ বিশ্বের প্রতিটি মানুষই তার আত্মীয়। 'সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই' এ বোধই বিশ্বপ্রেম সৃষ্টি করে। সংকীর্ণ অন্ধ জাতীয়তাবোধ থেকে মুক্তির উপায় এই বিশ্বপ্রেম।

উপসংহার : স্বদেশের প্রতি যার ভালোবাসা নেই সেই ব্যক্তি পশুর সমান। স্বদেশপ্রেম মানুষের জীবনের অন্যতম মহৎ চেতনা। এটি মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই মানুষ দেশের কল্যাণে কাজ করে। যথার্থ দেশপ্রেমিক নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে দেশকে স্থাপন করেন। আমাদের সকলকে স্বার্থহীন দেশপ্রেমিক হতে হবে। কেবল কথায় নয়, মেধায়-মননে, চিন্তাচেতনায়, কর্মে দেশপ্রেমকে স্থান দিতে হবে। তবেই আমাদের দেশ একদিন সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে, সার্থক হবে শহিদদের আত্মত্যাগ, বিশ্বের দরবারে আমরা বিশ্বপ্রেমিক জাতি হিসেবে পরিচিত হব।