হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মেরাজের ঘটনাবলী । Meraj Er Ghotona

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় মুসলীম ভাই ও বোনেরা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি রাসুল (সাঃ) এর মেরাজের ঘটনাবলী । আপনারা অনেকেই খোঁজাখোঁজি করে থাকেন রাসুল (সাঃ) এর মেরাজের ঘটনার হাদিস । মেরাজের ঘটনাবলী জনতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন । 

মেরাজের ঘটনাবলী


মেরাজের ঘটনাবলী

পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তাআলা হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নবুয়তের দশম বর্ষে তাঁর পঞ্চাশ বৎসর তিন মাস বয়োঃক্রমকালে রজব মাসের ২৬ দিবাগত রাত্র ২৭ রজব তাঁর পিয়ারা হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা বলার উদ্দেশ্যে জিব্রাঈল ফেরেশতার সাহায্যে স্বীয় সন্নিধানে উপস্থিত করেন, এরই নাম মে'রাজ ।

এ সম্পর্কে হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন। রজব মাসের ২৬ দিবাগত রাত্র ২৭ রজবে আমি নিদ্রিত ছিলাম। এমন সময় জিবরাঈল ও মিকাঈল ফেরেশতাদ্বয় আগমণ করে আমাকে নিদ্রা হতে জাগ্রত করলেন, আমাকে জমজম কূপের নিকট নিয়ে গেলেন এবং আমার বক্ষস্থল হতে নাভী পর্যন্ত বিদীর্ণ করে আমার দিল বাহির করে উহা জমজম কূপের পানি দ্বারা উত্তমরূপে ধৌত করে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপন করলেন এবং উহার সঙ্গে ঈমান ইলম্, জ্ঞান ও হিকমত সংযোগ করে দিয়ে বক্ষস্থল সেলাই করে দিলেন। আমি স্বচক্ষে তাদের কার্যকলাপ দেখতে পেলাম । কিন্তু তাতে আমার বিন্দু মাত্র কষ্ট অনুভব হল না।

হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে, এ রাত্রে চতুর্থবার তাঁর পবিত্র সিনা মুবারক চাক্‌ বা বিদীর্ণ করা হয়। ইতিপূর্বে আরও তিনবার তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ বা সিনা চাক করা হয়েছিল। প্রথম দুইবার বাল্যকালে, হযরত হালিমার গৃহে অবস্থানকালে এবং তৃতীয়বার নবুয়ত লাভের পূর্বক্ষণে হেরা পর্বতের সন্নিকটে। প্রথম ও দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদীর্ণের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর অন্তর হতে যাবতীয় কু-প্রবৃত্তি দূর করে যাবতীয় সদগুণের দ্বারা হৃদয়কে পরিপূর্ণ করে দেয়া। তৃতীয়বার বক্ষ বিদীর্ণের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর হৃদয়কে আল্লাহ্র ওহী সমূহ বক্ষে ধারণ ও উহার প্রকৃত মর্ম ও উদ্দেশ্য উপলব্ধি করার ক্ষমতাপ্রদান করা । চতুর্থ বারের বক্ষ বিদার্গের উদ্দেশ্য ছিল, আলমে মালাকুত অর্থাৎ ফেরেশতা জগতে ভ্রমণ করবার ক্ষমতা এবং আল্লাহ্র শক্তি, কুদরত, মহিমা ও জ্যোতি সমূহ দেখবার, বুঝবার ও সহ্য করবার ক্ষমতা প্রদান করা।

একটি রেওয়াতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ্ তাআলার আদেশে জিব্রাঈল ফেরেশতা ও মিকাঈল ফেরেশতা বেহেশত হতে বোরাক এবং আরও ৭০ হাজার ফেরেশতাসহ আগমণ করেন । হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) সেই সময় হযরত আলীর ভগ্নি হযরত উম্মেহানীর গৃহে নিদ্রিত ছিলেন। হযরত রাসূলাল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, সেই রাত্রে আমি এশার নামাযান্তে উম্মেহানীর গৃহে নিদ্রিত ছিলাম, এমন সময় জিব্‌রাঈল ফেরেশতা আসিয়া আমাকে নিদ্রা হতে জাগ্রত করলেন। আমি জাগ্রত হয়ে দেখলাম জিব্রাঈল ও মিকাঈল ফেরেশতাদ্বয় আমার শিয়রে দণ্ডায়মান আছেন। তাঁরা আমাকে বললেন।হে আল্লাহর পিয়ারা হাবীব! উঠুন, আজ আপনার মে'রাজের রজনী।

আমি শয্যা ত্যাগ করলে তারা আমাকে জমজম কূপের নিকট লইয়া গেলেন। তথায় তারা আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে আমার দিল জমজম কূপের পানি দ্বারা ধৌত করে পুনরায় উহা যথাস্থানে স্থাপন করে বক্ষস্থল সেলাই করে দিলেন।

অতঃপর আমি অজু করে মসজিদে যেয়ে দুই রাকাত নামায পড়ে বাহিরে এসে দেখলাম মসজিদের দরজার সামনে বোরাক দন্ডায়মান আছে। ফেরেশতাদ্বয় আমাকে বোরাকে আরোহণ করতে বললেন।

জিবরাঈল (আঃ) হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ)-কে বোরাকে আরোহণ করতে বলা সত্ত্বেও তিনি বোরাকে আরোহণ না করে কি যেন চিন্তা করতে লাগলেন। তাঁর দুই চক্ষু হতে দরদর ধারায় অশ্রু নির্গত হয়ে গণ্ডদ্বয় প্লাবিত হতে লাগল। এমন সময় আল্লাহ্র তরফ হতে বাণী আসল হে জিবরাঈল! তুমি আমার পিয়ারা হাবীবকে জিজ্ঞাসা কর তিনি কেন বোরাকে আরোহণ করতেছেন না এবং কেন অশ্রু বিসর্জন করতেছেন?

জিবরাঈল (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আপনি কেন বোরাকে আরোহণ করতে ইতস্ততঃ বোধ করতেছেন আর কেনইবা অক্ষ অশ্রু বিসর্জন করতেছেন? স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং আপনি স্বর্গীয় অশ্বে আরোহণ করে আল্লাহ্র দর্শন লাভে ধন্য হতে গমন করতেছেন । আপনার প্রতি পরম করুণাময় আল্লাহর এই গমন একটি বিশেষ রহমত, যা দুনিয়ার নবী বা অন্য কোন রাসূলের ভাগ্যে ঘটে নাই। এতদসত্ত্বেও আপনার ক্রন্দন করা নিতান্তই অশোভন ও অস্বাভাবিক।

জিব্রাঈলের প্রশ্নের উত্তরে হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বললেন।হে জিব্রাঈল। আজ আল্লাহ্ তাআলা আমার জন্য বোরাক প্রেরণ করেছেন, কিন্তু আমি চিন্তা করতেছি যে, কিয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতগণ ক্ষুধায়, পিপাসায় কাতর হয়ে উলঙ্গ অবস্থায় কবর হতে উঠিয়া হাশরের মাঠে গমন করবে তখন কিরূপে পঞ্চাশ হাজার বৎসরের রাস্তা পদব্রজে অতিক্রম করে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে ও ত্রিশ হাজার বৎসরের রাস্তা পুলছেরাত অতিক্রম করবে।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা ভ্রাতা-ভগ্নিগণ! চিন্তা করে দেখুন, এরূপ মহা আনন্দের সময়ও আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁহার উম্মতের কথা ভুলিতে পারেন নাই। এই জন্যই তাঁকে “শাফিয়িল ম্যুনেবীন ওয়া রাহমাতুললিল আলামীন” এই মহা-সম্মানজনক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ্ তাআলার তরফ হতে বাণী আসল।“ইয়াউমা নাহশুরুল মুত্তাকীনা ইলার রাহমানি ওয়াফদা”। (সূরা মরিয়ম-৮৫ আয়াত)। অর্থাৎ-হে নবী! আপনি নিশ্চিন্ত ও শান্ত হউন, আল্লাহ্ ভীরু ও আপনার ভক্ত উম্মতদিগকে কিয়ামতের দিন এরূপ স্বর্গীয় অশ্ব প্রদান করা হবে। তারা তথায় মেহমানের ন্যায় সমাদর ও অভিনন্দন লাভ করবে এবং বোরাকে আরোহণ করেই তারা পুলসিরাত অতিক্রম করবে। আল্লাহ্ তাআলার এই প্রতিশ্রুতি শ্রবণ করে হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বোরাকে আরোহণ করতে উদ্যত হলেন, কিন্তু বোরাক অত্যন্ত লম্ফ ঝম্ফ ও ছুটাছুটি করতে আরম্ভ করল। এতদ্দর্শনে জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, হে বোরাক! তুমি কি জাননা যে, আল্লাহ্র পিয়ারা হাবীব তোমার পিঠে আরোহণ করতে উদ্যত হয়েছেন, কেন তুমি এরূপ বেয়াদবী করতেছ?

বোরাক উত্তর করল-হ্যাঁ, আমি তা অবশ্যই অবগত আছি। কিন্তু আমার মনের একটি আশা এই যে, হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) আগে আমাকে একটি প্রতিশ্রুতি দিবেন, তৎপরে তিনি আমার পিঠে আরোহণ করবেন।

জিব্রাঈল (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাঁর নিকট কিসের প্রতিশ্রুতি চাও? বোরাক উত্তর করল, আল্লাহ্ তাআলা অগণিত বোরাক সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে আমি আল্লাহ্র পিয়ারা হাবীবকে নিজের পিঠে বহন করবার সৌভাগ্য লাভ করে নিজেকে ধন্য ও যাবতীয় বোরাকের উপরে নিজেকে গৌরাবন্বিত মনে করতেছি। আমার প্রার্থনা এই যে, কিয়ামতের দিনেও আমি যেন তাঁকে বহন করবার সৌভাগ্য লাভ করতে পারি। যাতে যাবতীয় বোরাকের উপরে আমার গৌরব অক্ষুন্ন থাকে।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বোরাককে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করলে সে স্থির হয়। তিনি বোরাকে আরোহণ করলেন। তার ডানে ও বামে জিব্রাঈল ও মিকাঈল ফেরেশতাদ্বয় এবং আগে ও পিছে আরও ৭০ হাজার ফেরেশতাসহ হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) মক্কা মুয়াজ্জমা হতে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে রওয়ানা হলেন। বোরাকের গতি এত দ্রুত যে বিদ্যুতের গতি তার তুলনায় তুচ্ছ বলে মনে হয় ।

হযরত রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বোরাক এত অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন যে, সম্মুখে যতদূর পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি চলে, ততো দূর সে এক পদক্ষেপে অতিক্রম করে। আমি তার পৃষ্ঠে আরোহণ করবার পর উহা এত দ্রুতগতিতে চলতেছিল যে, চতুর্দিকের দৃশ্য সমূহ দর্শন করার শক্তি আমার সম্পূর্ণরূপে তিরোহিত হয়ে গিয়েছিল। সোর্সঃ কোরআন হাদিসের আলোকে পঁচিশজন নবী-রাসুলের জীবনী, মোহাম্মদ এম.এ. সাইফুল ইসলাম (যুক্তিবাদী চাঁদপুরী)  

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মেরাজের ঘটনাবলী 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শিক্ষামূলক ব্লগ বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url